,

জিনের বাদশার কেরামতি

ফাইল ফটো

স্টাফ রিপোর্টারঃ প্রতিদিনের মতো রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়েছিলেন ইয়াসিন মিয়া। ভোর রাতের কিছু আগে তার মুঠোফোন বাজতে থাকে। ঘুমের চোখেই তিনি ফোনটা রিসিভ করেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফোনের ওপাশ থেকে আসে গায়েবি আওয়াজ ও কোরআনের বিভিন্ন আয়াত। প্রথমে কিছুটা ভয় পেয়ে যান ইয়াসিন। এরমধ্যেই তিনি শুনতে পান ওপাশ থেকে কেউ থাকে তার জীবনের বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে যাচ্ছে।

জীবনের ঘটে যাওয়া অনেক কথা যেগুলো তিনি কখনো কাউকেই শেয়ার করেননি সেগুলো শুনে রীতিমতো অবাক হয়ে যান। ভাবতে থাকেন কে সেই ব্যক্তি। নিজের সম্পর্কে এত কথা হুবহু বলে যাচ্ছে। আগ্রহ নিয়ে শুনতে থাকেন কথা। তখন ওই ব্যক্তি তাকে নিজেকে জিনের বাদশা ও আল্লাহর অলি পরিচয় দেয়।

বলে পাঁচটা শর্ত মানতে হবে। শর্ত মানলেই মিলবে গুপ্তধন ও স্বর্ণের ৭টি হাঁড়ি এবং একটি সোনার মূর্তি।
এসব শুনে ইয়াসিন লোভে পড়ে যান। তিনি ওই লোকের কথা বিশ্বাস করে তার ফাঁদে পা দেন। গুপ্তধনের আশায় লাখ লাখ টাকা দিয়ে নিঃস্ব হয়ে যান। বিভিন্ন অজুহাতে টাকা দিতে দিতে অপারগ হয়েও গুপ্তধনের দেখা পাননি। যখন বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার তখন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা মডেল থানায় একটি মামলা করেন ওই জিনের বাদশা পরিচয় দানকারী প্রতারকের বিরুদ্ধে।

মামলার তদন্ত করে ডিএমপি’র গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ (দক্ষিণ)। পরে সাইবারের একটি টিম মো. উজ্জ্বল মিয়া নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানতে পারেন জিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে উজ্জ্বলের শিকার শুধু ইয়াসিনই নয়। অসংখ্য মানুষকে লোভ দেখিয়ে সে নিঃস্ব করেছে। যারাই মধ্যে রাতে তার ফোন পেয়ে আগ্রহ দেখাতো তারাই ধোঁকা খেতো। ফোন করার পরই বুঝে যেতো কার কাছ থেকে টাকা হাতানো যাবে।

তদন্ত কর্মকর্তারা বলেন, মূলত ৫টি শর্ত দিয়ে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের বাসিন্দা উজ্জ্বল মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতো। শর্তগুলো হলো- গুপ্তধন পেতে হলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, মিথ্যা কথা না বলা, কোরআন তেলাওয়াত করা, গুপ্তধনের কথা গোপন রাখা ও গুপ্তধন পাওয়ার পর কিছু অংশ দান করা। পরে স্বর্ণের পুতুল পাইয়ে দেয়া, ৭টি স্বর্ণের হাঁড়ির খোঁজ দেয়া, স্বর্ণের হাঁড়ি ভেঙে গেছে জোড়া দিতে হবে, হাঁড়ির ভেতরে স্বর্ণ গলে যাওয়ায় স্বর্ণ কিনে দিতে হবেসহ নানা কৌশলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতো। উজ্জ্বল মিয়ার বড় ভাই ৩ বছর ধরে এই প্রতারণা করে আসছে। তার মাধ্যমেই জিনের বাদশা সাজার দীক্ষা নিয়ে দেড় বছর আগে প্রতারণা কাজ শুরু করে।

রমনা থানায় করা মামলায় ভুক্তভোগী ইয়াসিন মিয়া উল্লেখ করেছেন, মাঝরাতে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি নিজেকে জিনের বাদশা ও আল্লাহর অলি পরিচয় দিয়ে তার বিশ্বাস অর্জন করে। পরে তার কাছ থেকে জায়নামাজ কেনার কথা বলে ৪ হাজার ৭০০ টাকা নেয়। স্বর্ণের মূর্তির লোভ দেখানো হয়। টাঙ্গাইল এলেঙ্গা ব্রিজের নিচে স্বর্ণের মূর্তি রাখা আছে জানিয়ে প্রতারক উজ্জ্বলের ভাই রুবেল ৫ লাখ টাকা নেয়।

ভুয়া স্বর্ণের মূর্তিটি হাতে পাওয়ার পর এই কথা কাউকে বলতে মানা করে। এরপর উজ্জ্বল জানায়, তাকে ৭টি স্বর্ণের হাঁড়ি দেয়া হবে। যার মধ্যে ৩টি ভেঙে গেছে। উক্ত হাঁড়িগুলো মেরামতের জন্য ৩ ভরি স্বর্ণ কিনে না দিলে তার (ইয়াসিন) পরিবারের সবার ক্ষতি হবে। এ বাবদ নেয় ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। হাঁড়ির স্বর্ণ জমাট বেঁধে গেছে জানিয়ে নেয় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এভাবে নানা বাহানায় ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়।

ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের (দক্ষিণ) সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম লিডার সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) জুয়েল রানা মানবজমিনকে বলেন, গত ৯ই জুন গোবিন্দগঞ্জ থেকে আমরা তাকে গ্রেপ্তার করেছি। বড় ভাইয়ের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে উজ্জ্বল এই কাজ করছে। প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি অনেক মানুষের সঙ্গে সে প্রতারণা করে অনেক টাকা কামিয়েছে।

মধ্য রাতে ফোন দিয়ে গায়েবি আওয়াজ ও ধর্মীয় বিভিন্ন কথাবার্তা বলে টার্গেট ব্যক্তির বিভিন্ন সমস্যার কথা বলতো। এসব বলে তার প্রতি আকর্ষণ বাড়িয়ে সমস্যার সমাধান করার কথা বলে প্রতারণা করতো। তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে বেশকিছু তথ্য পাওয়া গেছে। সে আর কতোগুলো প্রতারণা করেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *